ছাত্রদল নেতাকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর আদালতে মামলা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ বালিয়াকান্দি আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন জিয়া স্মৃতি পাঠাগার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তুহিনুর রহমান। তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার বিলধামু গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে।
আদালতের বিচারক মৌসুমী সাহা মামলাটি আমলে নিয়ে বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন- বালিয়াকান্দি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সামা মো. ইকবাল হায়াত, বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হাকিম সাধন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নায়েব আলী, নাছির উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, নারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ও নারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কালাম।
এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তুহিনকে তৎকালীন রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের নির্দেশে মামলার অন্যান্য আসামিরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে। পরে নায়েব আলীর বাড়ির একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে বালিয়াকান্দি থানার সাবেক ওসি আবু সামা মো. ইকবাল হায়াতসহ অন্যান্যদের সহায়তায় তুহিনের পা উল্টা করে ঝুলিয়ে নির্যাতন চালিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মেরে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে ফেলার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। পরে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিলে তাকে পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়া হয়।
এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতের চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো হাসপাতাল ও ভেলোরে সিএনসি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তায় তিনি রাজধানীর ইবনেসিনা হাসপাতালে মেরুদন্ডের অস্ত্রপচার করে সি-৪ ও সি-৬ কৃত্তিম ডিক্স স্থাপন করলেও এখনও সস্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করতে চাইলে তাকে ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখা হয়। ক্রসফায়ারের ভয়ে তিনি এতোদিন পরিবার নিয়ে রাজবাড়ী জেলার বাইরে বসবাস করছিলেন। দেশের পরিবেশ ভালো হওয়ায় তিনি এ মামলাটি দায়ের করেন
এ মামলার আইনজীবী এবং রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তুহিনুর রহমানের দায়ের করা মামলাটি আদালতের বিচারক মৌসুমী সাহা আমলে নিয়ে বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হেসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনার কপি এখনো হাতে পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।