রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম, পাংশা পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল আল মাসুদ বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ কুন্ডু ও পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাসসহ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ পাংশা আমলী আদালতে পৃথক মামলা দুটি দায়ের করেন পাংশা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান (৩৭) ও উপজেলার চর দুর্লভদিয়া গ্রামের যুবদল নেতা রোকন খান (৪১)।
পাংশা উপজেলার গুধিবাড়ী গ্রামের মোন্তাজ আলী খানের ছেলে নাসির উদ্দিন খান সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী মনোয়ার হোসেন জনি, যুবলীগ নেতা মারুফ সরদার, পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ কুন্ডু ও কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনুসহ ৫৭ জনকে অসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী নাসির উদ্দিন খান বলেন, তিনি ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একটি এক্সকেভেটর (ভেকু মেশিন) কিনে একজনকে ভাড়া দেন। মামলার আসামিরা ওই বছরের ১ নভেম্বর তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেসময় তিনি বাধ্য হয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দেন। এরপর আসামিরা তার কাছে বাকি ১৫ লাখ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তিনি টাকা দিতে না পারলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ভেকু মেশিনটি পুড়িয়ে দেয়। এতে তার ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেননি। থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি।
বিজ্ঞ আদালত এ মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে, পাংশার চর দুর্লভদিয়া গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেন খানের ছেলে রোকন খান পাংশা পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিশ্বাস, পাংশার হাবাসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির শাকিল, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাসসহ ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
মামলার বাদী রোকন খান বলেন, আসামিরা তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে রাজী না হলে তারা তাকে হত্যা করার হুমকি দেয়। ২০২১ সালে ১০ এপ্রিল বিকেলে তিনি বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য পাংশা কুড়াপাড়া এলাকার কৃষি ফার্ম এলাকায় গেলে আসামিরা দেশীয় তৈরি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে ফেলে এবং হত্যার জন্য হাতুড়িপেটা করে। তখন গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে আসামিরা তাকে চিকিৎসা নিতে না দিলে পরবর্তীতে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। তৎকালীন সময়ে তিনি পাংশা থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। এখন পরিস্থিতি অনুকূলে হওয়ায় তিনি আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।
বিজ্ঞ আদালত এ মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদ উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন খানের দায়ের করা মামলা পিবিআই ও যুবদল নেতা রোকন খানের মামলাটি রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।