আজ ২৯শে আগস্ট রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক ও জেলা সমবায় ব্যাংক লিঃ-এর সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম.এ খালেকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০২০ সালের ২৯শে আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের (বিআইএইচএসএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
এর আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে অ্যাডভোকেট এম.এ খালেক (৬৪) ১৩ই আগস্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন। ১৬ই আগস্ট তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। নমুনা দেয়ার দিন থেকেই তিনি হালকা কাঁশি ও জ্বর নিয়ে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ১৮ই আগস্ট দিনগত রাতে হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ১৯শে আগস্ট সকালে তাকে রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় এবং ২৯শে আগস্ট সন্ধ্যার দিকে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটলে তাকে লইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
প্রয়াত এই রাজনীতিবিদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও প্রয়াত নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও তবারক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট এম.এ খালেকের বড় ছেলে রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ. খালেদ পাভেল বলেন, আমার বাবা ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের (জাগদল) সহযোগী সংগঠন জাগো ছাত্রদল রাজবাড়ী জেলা শখার আহ্বায়ক ছিলেন। পরের বছর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে তিনি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯০ এ স্বৈরাচার এরশাদ পতন আন্দোলনে তিনি রাজবাড়ী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া তিনি রাজবাড়ী জেলা বিএনপির কাউন্সিলের মাধ্যমে দুইবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের কিছু সংখ্যক নেতা পথভ্রষ্ট হয়ে সংস্কারপন্থি হয়ে কাজ করলেও আমার বাবা বারাবরের মতোই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবার ও বিএনপির প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে দলের বিস্বস্ত কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১৪ সালে আমার বাবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নিজের বিজয় সুনিশ্চিত জেনেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দলের প্রতি আনুগত্য রেখে তিনিও নির্বাচনে অংশ নেননি।
এম.এ. খালেদ পাভেল আরও বলেন, আমার বাবা রাজবাড়ী জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত করার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমৃত্যু কাজ করেছেন। আজীবন তিনি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। মানুষের বিপদে-আপদে তিনি সবসময় নিঃস্বার্থভাবে পাশে থেকেছেন এবং আমাকে ও আমার ছোটভাই এম.এ. তারেক পলিনকে সেই শিক্ষাই সবসময় দিয়ে গেছেন। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি সবসময় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও দরিদ্র মানুষদের তিনি বিনামূল্যে আইনি সেবা দিয়েছেন। সুখে দুঃখে সকলের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন আজীবন। এ কারণে রাজবাড়ীর মানুষ তাকে সবসময় দোয়া ও ভালবাসায় স্মরণ করে। আজ আমার বাবার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে সকলে আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন।