ক্ষমতার দাপটে রাতারাতি যাত্রী ছাউনি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে রাজবাড়ীর কালুখালীতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এ সময় ঘটনার মূল হোতা উপজেলার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে ভেঙে ফেলা যাত্রী ছাউনি পুনঃনির্মাণের দাবি জানানো হয়।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫ টায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কালুখালী চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে এ মানববন্ধনে স্থানীয় কয়েক শ’ নারী-পুরুষ অংশ নেন।
অভিযুক্ত মিজানুর রহমান মজনু রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের আস্থাভাজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেসময় মিজানুর রহমান মজনু জেলা পরিষদের সদস্য ছিল। পরে মজনু নিজের দোষ ঢাকতে তৎকালীন কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলামকে দায়ী করে মানববন্ধন করে। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে যাত্রী ছাউনি ভাঙার সঙ্গে মিজানুর রহমান মজনু জড়িত। ওই যাত্রী ছাউনির পেছনে মার্কেট নির্মাণ করার জন্যই রাতের অন্ধকারে যাত্রী ছাউনি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় মজনু। তারপরও মজনুর ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পেতনা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকা থেকে পালিয়ে যায় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে মজনুর গড়া অট্টালিকায় ভাঙচুর করে। অবসান ঘোষণা করে মজনুর ত্রাসের রাজত্বের।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সুবাদে মজনু (চেয়ারম্যান) মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তার হাত থেকে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এমনকি সাংবাদিকও রেহাই পাননি।
মানববন্ধন চলাকালে সহিদুল ইসলাম, ওহিদুর রহমান, আলমগীর হোসেন, রেজা মন্ডল নামের স্থানীয় কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। তারা প্রত্যেকে তাদের ওপর চালানো মজনু চেয়ারম্যানের নির্যাতনের চিত্র সকলের সামনে তুলে ধরেন।
সহিদুল ইসলাম বলেন, মজনু চেয়ারম্যান শুধু যাত্রী ছাউনিই ভাঙেনি। সে গুম, খুন ও চাঁদাবাজি করতো। এমন কোন অপরাধ নেই যে সে করেনি। মজনু ও তার লোকজন আমাকে ধরে দুর্গম চরাঞ্চলে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন চোখ বেধে ফেলে রাখে। আমার নির্যাতনের চিত্র ভিডিও ধারণ করে আমার স্ত্রীকে এ দৃশ্য দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেয়। এরকম আরো অনেক ঘটনা সবারই জানা।
মানববন্ধনে স্থানীয়রা মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে ভেঙে ফেলা যাত্রী ছাউনিটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানান।