রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে গ্রেফতারের জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ফ্রান্স প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতা।
বুধবার (২ অক্টোবর) রাতে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ফ্রান্স শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফ্রাস আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন।
পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। ফেসবুকে আশরাফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রাজশাহী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, পাবনা, সিলেটের এমপি-মন্ত্রী গ্রেফতারের নিউজ চাই না। র্যাব, ডিবি রাজবাড়ীর সাবেক চোর, দুর্নীতিবাজ রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে গ্রেফতার করতে পারলে; র্যাব-ডিবিকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে আমার পক্ষ থেকে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল ইসলাম ফ্রান্সে বসবাস করলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রীদের সমালোচনা করে আসছেন। পাশাপাশি তার নিজ জেলা রাজবাড়ীর রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও লেখালেখিতে সোচ্চার তিনি। এছাড়া সামাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজের সঙ্গেও যু্ক্ত রয়েছেন আশরাফুল ইসলাম।
ফ্রান্স প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রবাসে থাকলেও বরাবরই তিনি দেশের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। যে কারণে তিনি দলীয় কর্মী হয়েও দলের দুর্নীতিবাজ এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে কথা বলেছেন। মূলত রাজবাড়ী তার নিজের জেলা। যে কারণে বিভিন্ন সময় তিনি রাজবাড়ীর রাজনীতি ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের নিয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দেশ ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী এবং একজন দুর্নীতিবাজ। তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগাতে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি। দলমত নির্বিশেষে জিল্লুল হাকিমসহ তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে সবাইকে সোচ্চার হয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা উচিত।’
এরআগে ২০১৫ সালে রাজবাড়ী জেলার মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধে পুলিশকে অনুরোধ করে তৎকালীন এসপি জিহাদুল কবিরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন আশরাফুল ইসলাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজবাড়ীর শহর ও দৌলতদিয়াঘাট এলাকায় সিসি ক্যামেরা পুনঃস্থাপনের জন্য দেন কয়েক লাখ টাকা। এছাড়া জেলার বাল্যবিয়ে রোধে এ বিষয়ে সংবাদদাতাকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিটে পাঁচবার সংসদ সদস্য হন জিল্লুল হাকিম। এক সময় মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য মনোনয়ন কিনতে পারছিলেন না। অথচ অবৈধ উপায়ে এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক! ছেলে মিতুল হাকিমের নেতৃত্বে এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের বিপক্ষে কেউ কথা বললে চরম মূল্য দিতে হতো। রেহাই পাননি জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক এই রেলমন্ত্রী, তার ছেলে মিতুল হাকিমসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর আদালতে তিনটি ও বালিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি জিল্লুল ও মিতুলের। গাঢাকা দিয়েছে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীও।