রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্র বড়পুলে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অফিসের পাশের পূজা মণ্ডপে কয়েকটি প্রতিমার মুখের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন।
জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাজবাড়ী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে শহরের বড়পুল এলাকায় তাদের অফিসের সামনে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি করে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কাজী ইরাদত আলী আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে এবার দুর্গাপূজা না হওয়ায় তাদের অফিসের পাশে মণ্ডপ তৈরি করে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন স্থানীয়রা। ওই মণ্ডপ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধন কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক সরকার পরিবহনের মালিক কুঞ্জন সরকার।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে মণ্ডপে পাহারার ব্যবস্থা ছিল। মঙ্গলবার সকালে পাহারাদার চলে যায়। সকাল ১১টার দিকে ডেকোরেটর শ্রমিক মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো ও সাজসজ্জার কাজ করতে আসে। এসময় মণ্ডপের সামনে থাকা কাপড় সরালে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি তার চোখে পড়ে। মণ্ডপে থাকা দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষী, কার্তিক ও গণেশের মাথা খুচিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ডেকোরেটরের শ্রমিক বিষয়টি মণ্ডপ কমিটিকে জানালে তারা প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। মণ্ডপ কমিটি ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দুপুর থেকে মণ্ডপের সামনের অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঘিরে কারিগর এনে প্রতিমার ভাঙা অংশ মেরামত শুরু করেন। তবে সন্ধ্যায় ঘটনাটি জানাজানি হলে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সিদ্ধার্ত ভৌমিকসহ জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় এক হিন্দু যুবক বলেন, ঘটনা ভোরের। সারাদিন ধরে আয়োজকরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান। আমি সন্ধ্যায় জানার পরে মণ্ডপে যাই। তবে মণ্ডপের সামনের অংশে সাদা কাপড় দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। আমাকে পুলিশ ভেতরে যেতে দেয়নি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজী হননি ওই মণ্ডপ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধন কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক কুঞ্জন সরকার।
তবে রাজবাড়ী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাস বলেন, ঘটনা ভোরের দিকের। বাঁশ দিয়ে খুচিয়ে গণেশের মাথাসহ শুঁর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া দেবীদুর্গাসহ আরও কয়েকটি প্রতিমার মুখের কিছু অংশ খুচিয়ে ভাঙা হয়েছে। তবে ওই মণ্ডপ কমিটির লোকজন আমাদের কিছু জানায়নি। দুপুরে আমরা ঘটনাটি শুনে পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। তিনি গিয়ে দেখেন কারিগর দিয়ে প্রতিমার ভাঙা অংশ ঠিক করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের বা ওই মণ্ডপ কমিটির কারো কোন অভিযোগ নেই।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে যে কোন সময় কে বা কারা মণ্ডপের ভেতরে ঢুকে দুর্গা, দুর্গার পাশে থাকা লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমার মুখের সামান্য অংশ ভেঙে ফেলেছে। বিষয়টি মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি। আমাদের সোর্সের মাধ্যমে জেনে আমি দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
তিনি বলেন, আমরা শহরের প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু এই মণ্ডপ কমিটি আজকে ঘটনা ঘটার পর সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান সম্পাদক : এম.এ. খালেদ পাভেল, নির্বাহী সম্পাদক : এম.এ. তারেক,বার্তা সম্পাদক : আশিকুর রহমান, ই-মেইল: rajbarinews24@gmail.com, মোবাইল: ০১৭২১-০৮৯৮২৫, ০১৭১৩-২৩০২৬৭