ভালোবেসে জীবনসঙ্গীকে মানুষ কতই না প্রতিশ্রুতি দেয়। বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচবো, মরলে একসঙ্গেই মরবো। এমন বাক্যও বিনিময় হয় অনেক। তবে, জন্ম-মৃত্যুর পূর্ব নির্ধারিত খাতায় এ অংক মেলে ক’জনের। কিন্তু এমনই এক ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামে।
এই গ্রামের ৬০ বছরের সংসার জীবনে সুখি দম্পতি আব্দুল কাদের শেখ (৮৫) ও জাহানারা বেগমের (৭৫) একই দিনে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। পাশাপাশি দাফন হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে স্ত্রী জাহানারা বেগমের মৃত্যুর ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে মারা যান স্বামী আব্দুল কাদের শেখ।
আব্দুল কাদের শেখ আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুপুরে একসঙ্গে জানাজা শেষে গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয় স্বামী স্ত্রীকে।
স্বজনরা জানান, আব্দুল কাদের ও জাহানারা বেগম দম্পতির জীবদ্দশায় চাওয়া ছিল তাদের মৃত্যু যেনও একদিনেই হয়। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে আব্দুল কাদের ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা আলাদা অলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহানারা বেগম। তার মরদেহ স্বামীর বাড়িতে না নিয়ে একই ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে নেয়া হয়। প্রথমে স্বামী আব্দুল কাদেরের কাছে গোপন রাখা হয় স্ত্রীর মৃত্যুর খবর। গভীর রাতে এ খবর জানতে পেরে ভেঙে পড়েন আব্দুল কাদের। রাতেই পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে হাসপাতাল থেকে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন।
সকালে পরিবারের লোকজন আব্দুল কাদেরকে স্ত্রীর মরদেহ দেখানোর জন্য তার শ্বশুরবাড়ি ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে আনার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় স্ত্রীর মরদেহ দেখার আগেই সকাল ৯ টার দিকে মারা যান আব্দুল কাদের। পরে তার মরদেহ স্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়। সেখানে স্বামী স্ত্রীর গোসলসহ অন্যান্য ধর্মীয় কাজ শেষে দুপুরে তাদের মরদেহ আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এনে জানাজা নামাজ পড়ানো হয়। এরপর আব্দুল কাদেরের বসতভিটা আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।
আব্দুল কাদেরের ছেলে লতিফ শেখ বলেন, ৬০ বছরের সংসার জীবনে আমার বাবা-মা অনেক মিল মহব্বতে থাকতেন। তাদের চাওয়া ছিল একসঙ্গে যেন তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারেন। রাতে মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর বাবা চিৎকার করে মাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, আমিও তোমার কাছে আসতেছি। সকালে মায়ের মরদেহ দেখার আগেই বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সবাই আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
আব্দুল কাদেরের প্রতিবেশী খোরশেদ আলম বলেন, কাদের ভাই ও তার স্ত্রী বেঁচে থাকতে সব সময় কামনা করতেন একসঙ্গেই যেন তাদের মৃত্যু হয়। তারা মরণেও পাশাপাশি কবরে থাকতে চেয়েছিলেন। অবশেষে অলৌকিকভাবে তাদের সেই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তারা পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। আমি মনে করি এটা স্বামী-স্ত্রীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ্ তাদের বেহেশতবাসী করুন।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি বিস্ময়কর। স্বামী-স্ত্রীর একই দিনে স্বাভাবিক মৃত্যু তেমন দেখা যায় না।