
পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় একের পর এক ঘটছে শ্যালো মেশিন (সেচযন্ত্র) চুরির ঘটনা। ফলে সময় মতো ক্ষেতে পানি দিতে না পেরে সেচ সংকটে পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসলের বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে কেউ কেউ নতুন করে শ্যালো মেশিন কিনে মাঠে স্থাপন করছেন, এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।
জানা গেছে, চলতি বছর রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এখনো কিছু কিছু মাঠে পেঁয়াজ রোপণ চলছে। অনেকে রোপণ শেষে সেচ দেয়াসহ নানা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঠিক এমন সময়েই চোর বিভিন্ন মাঠ থেকে শ্যালো মেশিন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জেলার সফল কৃষি উদ্যোক্তা কাজী সিদ্দিকুর রহমান। সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠে (গাইরের চকে) তার মাল্টা বাগান রয়েছে। পাশাপাশি এ মাঠে পেঁয়াজেরও আবাদ করেন তিনি। মাল্টা বাগান ও পেঁয়াজ ক্ষেতে সেচ দিতে মাঠের মধ্যে আলাদা জায়গায় দুটি শ্যালো মেশিন স্থাপন করেন কাজী সিদ্দিক। গত ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে অজ্ঞাতনামা চোর তার একটি শ্যালো মেশিন চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তার অপর শ্যালো মেশিনটিও চুরি হয়ে যায়।
কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দেড় মাসের ব্যবধানে মাঠ থেকে আমার দুটি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। আমার শ্যালো মেশিন দিয়ে শুধু আমি একাই নয়; মাঠের অনেক কৃষক তাদের ক্ষেতে সেচ দেন। আমার দুটি শ্যালো মেশিনসহ গত দুই মাসের মধ্যে এই মাঠ থেকে ৭ থেকে ৮ টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। শ্যালো মেশিন চুরি হওয়ায় আমিসহ অন্য কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
একই মাঠের কৃষক মমিন মোল্লা বলেন, ‘সেচ দেয়ার জন্য দুই বছর আগে আমি প্রায় ১৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি শ্যালো মেশিন কিনে মাঠের মধ্যে স্থাপন করি। দুই মাস আগে রাতের অন্ধকারে চোর আমার শ্যালো মেশিনটি চুরি করে নিয়ে যায়। আবারও আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি শ্যালো মেশিন কিনে বর্তমানে সেচ দিচ্ছি।’
কৃষক আমিন শেখ বলেন, ‘আমাদের এই মাঠে পেঁয়াজ, গম, সজ, মশুরি ও সরিষার আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ফসলের ক্ষেতেই বর্তমানে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। গত দুমাসের মধ্যে এ মাঠ থেকে ৭-৮টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। একের পর এক শ্যালো মেশিন চুরি হওয়ায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। চুরির ভয়ে সেচ দেয়া শেষে ভারি শ্যালো মেশিন খুলে বাড়িতে নিতে হচ্ছে, আবার সেচ দেয়ার সময় বাড়ি থেকে এনে মাঠে স্থাপন করতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুটিই বেড়েছে। আমাদের দাবি, পুলিশ যেন এই চোরচক্র ধরার বিষয়ে সক্রিয় হয়।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, ‘ফসলি জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকদের শ্যালো মেশিন চুরির বিষয়টি আমি আগামী আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে উত্থাপন করবো।’
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শ্যালো মেশিন চুরির ঘটনায় কোনো কৃষক থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে চুরি ঠেকাতে ওই এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।’