
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১২ টার দিকে তাকে রাজবাড়ী সদর আমলী আদালতে তোলা হলে তার আইজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে গত ৩০ আগস্ট কাজী কেরামত আলীসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন রাজিব মোল্লা নামে এক শিক্ষার্থী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় রোববার রাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে কাজী কেরামত আলীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সদর উপজেলার মাটিপাড়ার কাউরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছেলে ও রাজবাড়ী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র রাজিব মোল্লা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, অভিভাবক ও শিক্ষকরা রাজবাড়ী শহরের বড়পুল মোড়ে অবস্থান নেন। বিকেলে উল্লেখিত এজাহারনামীয় আসামিরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান।
সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নির্দেশে এজাহারনামীয় আসামিরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা নিক্ষেপ করে ও গুলি করে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়।
আসামিরা আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেননি। আসামিদের আক্রমণে সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, নুরুন্নবী, আশিক ইসলাম অভি, রাজিব মোল্লা, মেহেরাব, আলতাফ মাহমুদ সাগর, উৎস সরকার, রিয়াজসহ অসংখ্য আন্দোলনকারী আহত হন।
রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজিব মোল্লার দায়ের করা মামলায় হুকুমের আসামি কাজী কেরামত আলী। তার নির্দেশে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। তাকে গ্রেফতার করে আজ আদালতে তোলা হলে তার আইজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত গণপরিষদ সদস্য কাজী হেদায়েত হোসেনের বড় ছেলে। তিনি রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনের ৬ বারের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাজী কেরামত আলী আত্মগোপনে ছিলেন।